“ ইস কমে নাখ ডয়েচল্যান্ড” হে আমি জার্মানি আইতাছি। আপনার অ্যাডমিশন, ভিসা সকল ধাপের কাজ শেষ। তার মানে আপনার মনে হওয়াটা স্বাভাবিক যে, সকল কঠিন ধাপ তো শেষ এখন আমার জার্মানিতে যাওয়া কে আটকায়।
কিন্তু না ভাই, ওয়েট আসল কথা আপনি মাত্র ঘুঘুর দেখা পেয়েছেন কিন্তু ঘুঘুর ফাঁদ এখনও বাকি। জার্মানিতে সব থেকে কঠিন কাজ হচ্ছে বাসা খুঁজে পাওয়া। বাংলাদেশের চাকুরীর বাজারের মতো, জার্মানিতে বাসা খুঁজে পাওয়া মানে আপনি আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন।
জার্মানিতে যাওয়ার আগের সব থেকে বড় কথা, জার্মানিতে আপনার মতো ব্যাচেলর কে কেউ বাসা ভাড়া দিতে চাইবে না। আপনি কবে আসবেন, তার উপরে ভিত্তি করে মালিকের জন্য আপনাকে বাসা ভাড়া দেওয়া ব্যার্থ প্রজেক্ট। বর্তমানের সকল স্থানের প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটের কথা চিন্তা করলে জার্মানির প্রায় সব শহরেই একি অবস্থা। তার মধ্যে থেকে কিছু শহরে ভিন্ন অবস্থা, সেখানে বাসা খোঁজার ঝামেলা নেই। তাদের কোন চিন্তা নাই। কিন্তু অন্যদের কি উপায়??
Don’t worry bro…
We are here to help you…
আপনার জন্য জার্মানিতে বাসা খোঁজার এই দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চার-এর কিছু ধারনা ও পথনির্দেশনা নিয়ে আমাদের আজকের পোস্ট।
বাসা-বাড়ির প্রকারভেদঃ
হ্যায়রে… জার্মানিতে যাওয়ার জন্য এখন বাসা-বাড়ির প্রকারভেদও জানতে হবে?
-জি ভাই। জার্মানিতে বাসা ভাড়া নেওয়ার আগে প্রথমেই কিছু টার্মিনোলজি জানা খুব জরুরী এবং সেই সাথে বাসা-বাড়ির প্রকারভেদও জানা দরকার।
- ‘স্টুডেন্ট ডর্ম’ বা ‘স্টুডেন্ট ভার্খ’: জার্মানিতে ভাড়া এবং ফ্যাসিলিটস এর দিক থেকে সব চেয়ে উত্তম। যাকে বলা যায়, “সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ”। এখানে সিঙ্গেল অ্যাপার্টমেন্ট আপনি সকল ধরনের শুবিধা পাবেন।
- প্রাইভেট হাউজিং : সিঙ্গেল অ্যাপার্টমেন্ট, যেখানে একের অধিক রুম থাকবে। সাথে কিচেন বাথরুমের সব ফ্যাসিলিটিস। এই অ্যাপার্টমেন্ট আমাদের দেশের মতো।
- ভিগেঃ শেয়ার্ড অ্যাপার্টমেন্ট। যেখানে দুইয়ের অধিক মানুষ একসঙ্গে থাকার সুযোগ আছে। পার্থক্য, এই ধরনের বাসায় প্রতিটি রুমের জন্য আলাদা ফার্নিচার এবং লকিং সিস্টেম থাকে। কম সুযোগ-সুবিধার মধ্যে কিচেন এবং বাথরুম একসাথে বা শেয়ার করতে হয়।
- ফার্নিচার বিবেচনার জার্মানিতে বাসা আবার দুই ধরনের।
ফার্নিচার বিবেচনার জার্মানিতে বাসা আবার দুই ধরনের।
ক। ফার্নিশড এবং খ। ফার্নিচার ছাড়া।
সকল জায়গাতেই জিনিসপত্র কেনা এবং টানাটানি করা বেশ ঝামেলার একটা কাজ আর টাকা পয়সার বিষয় তো আছেই।
এসকল কারনে সকলেই পছন্দ ফার্নিশড রুম। আপনার ভাগ্য ভাল হলে; খাট, আলমারি, সোফা এবং টেবিল এই সাধারন আসবাবপত্র গুলি পেয়ে যাবেন ফার্নিশড রুমে।
জার্মানি প্রধানত শীত প্রধান দেশ। সেই কারণে বাসা ভাড়া এবং হিটিং খরচ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ধরনের বাসা আবার দুই ধরনের।
১। ‘ভারম মিটে’: এই ধরনের বাসায় যাবতীয় সকল বিল যেমনঃ পানি, বিদ্যুৎসহ অন্য কোন বিল আপনাকে আলাদা পে করতে হবে না। যেটি মোট বাসা ভাড়ার সঙ্গেই মিলানো থাকে।
২। ‘কাল্ট মিটে’: সকল ধরনের বিল বাদে এর ধরনের বাসার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
ভাড়া নির্ধারন পদ্ধতিঃ
সাধারণত বাসা ভাড়া রুমের সাইজ, বিল এবং ফ্যাসিলিটির উপরে নির্ভর করে নির্ধারন করা হয়ে থাকে। প্রতিটি শহরেই প্রতি স্কয়ার মিটারে জন্য ভাড়া নির্ধারন করা থাকে। যে কারনে ছোট শহরগুলিতে বাসা ভাড়া কম এবং বড় শহরগুলিতে বেশি।
জার্মানিতে ‘স্টুডেন্ট ডর্ম’ বা ‘স্টুডেন্ট ভার্খ’ ভাড়া এবং ফ্যাসিলিটস এর দিক থেকে সব চেয়ে উত্তম। যাকে বলা যায়, “সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ”। এখানে সিঙ্গেল অ্যাপার্টমেন্ট মাসিক ২০০-৪০০ ইউরোতে পাওয়া যায়। আর শেয়ার্ড রুম ১৫০-২০০ ইউরো তেই পাওয়া যায়। শহরভদে এই রেঞ্জের মধ্যে ভাড়া নির্ধারিত হয়ে থাকে।
প্রবলেম দেখা দেয় প্রাভেট হাউজিং নিয়ে। এধরনের বাসার প্রতিটি ১০/১৫ স্কায়ার মিটার শেয়ার্ড অ্যাপার্টমেন্টের রুমের জন্য ১৫০-৫০০ ইউরো পর্যন্ত ভাড়া উঠানামা করে থাকে। অবস্থান এবং শহরভেদে এই ভাড়া আরো বেশিও হতে পারে। সৌভাগ্য আপনার সঙ্গী হলে, ফার্নিশড রুমও পেয়ে যেতে পারেন। না পেলে নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে হবে।
আপনি যদি একটু ভালভাবে চেষ্টা করেন তবে, ৩০০-৫০০ ইউরোতে ২-৩ রুমের অ্যাপার্টমেন্ট পেতে পারেন এবং সেখানে ২-৩ জন মিলেমিশে থাকতে পারলে টাকার দিক থেকে বেস সেভ হবে।
বাসা খোঁজার পদ্ধতিঃ
স্টুডেন্টটেনভার্খঃ
জার্মানিতে বাসা বাড়ি খোঁজার যে কয়টি উপায়া আছে। তার মধ্যে সব থেকে ভাল ‘স্টুডেন্টটেনভার্খ’। প্রথমত শিক্ষার্থী হিসাবে সবার আগে স্টুডেন্টটেনভার্খ-এ আবেদন করতে হবে। অ্যাডমিশন পাবার পর পরই আবেদন করা উচিৎ। কিন্তু এই ক্ষেত্রে শহর এবং অবস্থান অনুযায়ী প্রতিযোগিতা সাধারণত অনেক বেশি থাকে।
এই বিষয় সম্পর্কে আপনি আপনার অ্যাডমিশন ইমেইলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন। যদি না থাকে অথবা খুঁজে না পেলে কি করবেন??
জি, Google.com –এ গিয়ে ছার্চ করুনঃ studentenwerke+ আপনার বাছাইকৃত শহরের নাম। এই কাজটি আরেকটু সহজে করা যেতে পারে DAAD –এর ওয়েব সাইট থেকেঃ DAAD Student residence Hall
প্রাইভেট হাউজিং :
জার্মানিতে বাসা খোঁজার জন্য সাধারণত অন-লাইনের সাহায্য নিতে হয়। জার্মানিতে বাসা খোঁজার কিছু জনপ্রিয় ওয়েব সাইট রয়েছেঃ
ভিগে-গেজুক্ট
ইমোবিলিয়েন-স্কাউট ২৪
ইবে-ক্লাইন-আনসাইগেন
উল্লেখিত, ওয়েব সাইটগুলির ধরন একই রকমের। লোকেসন, রুমের ধরন, রিকোয়ারমেন্টস সকল বিসয় সিলেক্ট করে সার্চ করলে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন। প্রতিটি বিজ্ঞাপনে ব্রুম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ থাকে এবং বিজ্ঞাপনদাতার নাম্বারও উল্লেখ থ্যাকে।
শেয়ার্ড অ্যাপার্টমেন্টঃ
জার্মানিতে শেয়ার্ড অ্যাপার্টমেন্ট বিষয়টি বেশ ভালো। এই ক্ষেত্রে বর্তমান ভাড়াটিয়াদের পক্ষ থেকে একজন থাকে, যার দায়িত্ব বা চেষ্টাই থাকে নতুন কোন ভাড়াটিতাকে নিজেদের মত করে খোঁজ করা। তাদের চেষ্টা থাকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ভাল জীবনযাত্রার মান দেখে কাউকে নির্বাচন করা। তাই, আপনি যখন রুম ভাড়া নেওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন তারা আপনার সাক্ষাৎকার নিতে পারেন এবং আপনার সিভি ও মোটিভেশন জানতে চাইবেন।
লোকাল হাউজিং :
জার্মানির প্রায় সকল শহর গুলিতেই লোকাল হাউজিং এর ব্যাবস্থা থাকে। যারা সাধারণত স্টুডেন্টদের টার্গেট করে থাকেন। শহর অনুযায়ী এগুলো ভিন্ন হতে পারে। লোকাল হাউজিং বিষয় জানার উপযুক্ত মাধ্যম সিনিয়র ভাই-আপা
আগে বাসা না পেলে কি করবেনঃ
জার্মানির ছোট-বড় অনেক শহরই স্টুডেন্ট কেন্দ্রিক। বাসা খোঁজার প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি। তাই, এটা ভাবা বোকামি যে, দেশ থেকে আসার আগেই বাসা পেয়ে যাবেন। এখনে, বাসা পাওয়া না পাওয়ার সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি। পেলে মাসা-আল্লাহ ভাল, না পেলে হতাশার কিছু নাই। কারন, জার্মানিতে আসার আগই বাসা পাওয়া অনেক টাফ একটি বিষয়।
মনে করি, উপরে উল্ল্যেখিত কোন মাধুমেই আপনার বাসা ঠিক হল না। তার মানে কি আপনার জার্মানিতে যাওয়া হবে না??
-জি অবশ্যই হবে।
একটি তথ্য আগে দেওয়াই ভাল, ভিসা ইন্টার্ভিউ এর সময় ‘স্টুডেন্টটেনভার্খ’ এর আবাদনের সকল ডকুমেন্টস দেখিয়ে সহজেই ইন্টার্ভিউতে পাস করে যাবেন। আগে বাসা পেতেই হবে এতা শর্ত না।
কিন্তু বড় একটা সমস্যা হচ্ছে, জার্মানিতে যাওয়ার আগে থাকার জন্য কিছু একটা ব্যাবস্থা না করতে পাড়লে, থাকবেন কথায় এবং কিভাবে?? অন্তত্য সপ্তাহ-কয়েকের জন্য হলেও আগে কিছু একটা ব্যাবস্থা হয়া দরকার। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত এবং সাশ্রয়ী ব্যাবস্থা হচ্ছেঃ
ইয়ুথ হোস্টেল :
জার্মানিতে উচ্চ-শিক্ষার জন্য যাওয়ার ক্ষেত্রে থাকার জায়গার ব্যাবস্থা করা অনেক গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। আশা করি, আপনি যদি আমাদের দেখানো উপরের ধাপ গুলি জেনে বুঝে আপ্পনার পদক্ষেপ সঠিক ভাবে নিতে পারেন তবে, দেশ থেকেই থাকার স্থান এর ব্যাবস্থা হয়ে যাবে। আপনার জন্য অনেক শুভ কামনা ও দুয়া জানিয়ে শেষ করছি। ধন্যবাদ।