সকল দেশ থেকেই উচ্চ-শিক্ষার জন্য জার্মানিতে আবেদন করা অনেক সহজ। কিন্তু সিলেকশন বেশ স্ট্রেট-ফরওয়ার্ড। প্রতিটি কোর্সের চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন এবং চাহিদা অনুযায়ী আপনার যোগ্যতা থাকতে হবে। আর সঠিক যোগ্যতা না থাকলে আপ্লিকেশন রিজেক্ট হবে। স্বয়ং জার্মানির চ্যাঞ্ছেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলেরও ক্ষমতা নেই আপনাকে অফার লেটার দেওয়ার।
ভার্সিটির চাহিদা এবং আপনার যোগ্যতা দুইয়ের সমন্বয়ে আবেদন করা উচিৎ। অন্যথায় ভুরি ভুরি আবেদন করার পরেও রিজেকশন লেটার নিয়েই কান্নাকাটি করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
সাবজেক্ট সম্পৃক্ততাঃ
ব্যাচেলরে এক সাবজেক্টে পড়ে মাস্টার্সে অন্য সাবজেক্ট পড়তে যাওয়ার অনেক রেকর্ড নর্থ অ্যামেরিকার দেশগুলোতে পাওয়া যায়। প্রফেশনালিজমে জার্মানরা বেশ স্ট্রেট। ব্যাচেলরের সাথে মাস্টার্স কোর্সের সরাসরি মিল থাকতে হবে, অন্যথায় সরাসরি রিজেকশন। যেমন ধরুনঃ আপনি CSE পড়ে কম্পিউটার অথবা কম্পিউটার সম্পর্কিত সাবজেক্টে পড়তে পারবেন। কিন্তু জীব-বিজ্ঞানে হাজারও ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব না।
অ্যাকাডেমিক প্রোফাইলঃ
জার্মানিতে আবেদনের জন্য সব থেকে বেশি জরুরি বিষয় হচ্ছে, আপনার অ্যাকাডেমিক প্রোফাইল অর্থাৎ আপনার সি.জি.পি.এ এবং আই.ই.এল.টি.এস স্কোর।
বেশির ভাগ জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জার্মান স্কেলে সি.জি.পি.এ ২.৫ চেয়ে থাকে। কিছু ভার্সিটির ক্ষেত্রে ১.৭ এবং কোথাও ৩.০ বা তার বেশি দিয়েও হতে পারে। তাই, আবেদন করার আগে ভার্সিটির রিকোয়ারমেন্ট সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকা আবশ্যক।
ভার্সিটির চাহিদা অনুযায়ী জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ অথবা আই.ই.এল.টি.এস স্কোর থাকতে হবে। কিছু কোর্স আই.ই.এল.টি.এস এর সাথে জার্মান ভাষাও চেয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনার যদি জার্মান ভাষার সার্টিফিকেট না থাকে তবে, আপনার রিজেকশন সু-নিশ্চিত।
ক্রেডিট পয়েন্টঃ
সাধারণত, কোর্স অনুযায়ী কিছু প্রিরিকুইজিট থাকে। মনে করুন, আপনি একজন ইলেকট্রিক্যালের স্টুডেন্ট। আপনার জন্য উল্লেখ থাকতে পারে কিছু কোর্স যেমনঃ গণিত, সার্কিট ডিজাইন, প্রোগ্রামিং বিষয়গুলিতে ১০ অথবা ১৫ অথবা ২০ ক্রেডিট অবশ্যই থাকতে হবে। কোর্স ওয়েব সাইটে সাধারণত বিস্তারিত বর্ণনা থাকবে। তাই, আবেদন করার আগে আপনাকে সেই বিষয়গুলি ভাল করে ম্যাচ করে নিতে হবে।
কোন কারনে আপনার বাছাই কৃত কোর্সের নির্দিস্ট ক্রেডিট পয়েন্ট থাকলে আবেদন না করাই উত্তম। তবে, আপনার টাকা-পয়সার মায়া কম থাকলে আবেদন করতে পারেন। সময় শেষে ফলাফল একই, রিজেকশন অথবা স্বেচ্ছায় প্রস্থান।
অ্যাডমিশন রেস্ট্রিকশনঃ
জার্মানিতে কিছু কোর্স আছে রেস্ট্রিকটেড এবং কিছু আছে ওপেন কোর্স।
রেস্টিকটেডঃ রেস্ট্রিকটেড মানে হচ্ছে এখানে আসন সংখ্যা আগেই নির্ধারিত। অ্যাডমিশন কমিটি এই বিষয় অনেক বেশি কঠোর। যতজন আবেদন করবেন, তাদের প্রোফাইল বা স্কোর অনুযায়ী শুরুতেই তাদের সিরিয়াল করবেন। সেই সিরিয়াল থেকে প্রথম ১৫-২০ জনকে অ্যাডমিশন লেটার পাঠাবেন। সুতরাং, এখানে প্রতিযোগিতা টপ লেভেলের হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ওপেন অ্যাডমিশনঃ এটি ‘ওপেন বুফে’ ধরনের। অর্থাৎ যত ইচ্ছা ততো। এখানে কোন সিরিয়াল নাই। ভার্সিটির নির্ধারিত মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট যতজন পূরন করবেন সকলকেই অ্যাডমিশন লেটার পাঠানো হবে।
আর তাই, অবশ্যই আবেদন করার আগে ওয়েব সাইট ঘাঁটা-ঘাঁটি করতে হবে এবং প্রয়োজনে কোর্স কো-অর্ডিনেটরের থেকে ইমেইলের মাধ্যমে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে।
মোটিভেশন লেটারঃ
আপনি কেন সেরা? বাস্তব এবং মার্কেটিং এর আলোকে অ্যাডমিশন কমিটিকে ইমপ্রেস করতে হবে। যেটা আপনাকে মোটিভেশন বা কভার লেটার দিয়ে করতে হবে। এই লেটার অনেক গুরুত্বপুর্ণ। অতীতে অনেকেই ভাল মানের মোটিভেশন লেটা লিখেই অ্যাডমিশনে নিজের স্থান দখল করে নিয়েছেন।
আপনার জন্য প্লাস পয়েন্টস্ হচ্ছে যে, অল্প কিছু কোর্স ছাড়া অধিকাংশ কোর্সেই মিটিভেশন লেটার আছে। আপনার জিপিএ ৫ নাকি ৭ সেটা অ্যাডমিশন কমিটিকে বুঝাতে হবে আপনার মোটিভেশন লেটার দিয়ে। অ্যাডমিশনের জন্য এটা অনেক গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করে। নিন্মমানের কপিপেস্ট করা মোটিভেশন লেটার দিয়ে অনেক ভাল জিপিএ থাকলেও রিজেকশনের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
অভিজ্ঞতাঃ
ভাল জিপিএ-এর পাশাপাশি কিছু অভিজ্ঞিতা থাকলে ভাল। অনেক কোর্স আছে যেটায় রিকোয়ারমেন্ট হিসাবে কাজের অভিজ্ঞতা চেয়ে থাকে। তাই, আবেদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সকল কিছু জেনে বুঝে তার পরে আবেদন করবেন।
আমাদের দেশীয় অধিকাংশ ব্যাচেলর প্রজেক্ট, থিসিস, ইন্টার্নশীপ করার প্রচলন আছে। আপনার কোর্সে অভিজ্ঞতা চায়নি কিন্তু অভিজ্ঞতা থাকলে যোগ করে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। তাই, এই বিষয়ে একটু মার্কেটিং-এর ভাষায় অ্যাডমিশন কমিটির কাছে তুলে ধরুন।
আশা করি যারা জার্মানিতে যেতে চান তারা আবেদন করার আগে খুব ভাল মত জেনে বুঝে আবেদন করবেন। আপনার জন্য রইল অনেক শুভকামনা। ধন্যবাদ।